অশৌচের প্রকার কতো প্রকার?

অশৌচের প্রকার ভেদ বিষয় আলোচনা করব। সর্বাগে পক্ষিণী অশৌচ কাকে বলে, দুই রাত্রি এক দিবস অথবা দুই দিবস এক রাত্রি এই কালকেই পক্ষিনী বলা হয়। পক্ষিনী অশৌচ

অদন্তজননাৎ সদ্য অচূড়ান্তাদহ নিশম।

অতস্থাৎ ত্ৰিৱাত্ৰেনত দুগ্ধং দশভিদ্দি নৈঃ ॥ (গঃ পুঃ পর্বঃ খঃ ১৫)

অর্থাৎ যে পর্যন্ত নামকরণ না হয় সে পর্যন্ত সদ্য অশৌচ, এবং যে পর্যন্ত চূড়াকরণ অর্থাৎ দুই বৎসর পর্যন্ত বয়স্কার মরনে অহোরাত্র অশৌচ পালন করতে হবে। এরপরে বিবাহের পূর্ব পর্যন্ত পক্ষিনী অশৌচ পালন করতে হবে। বিবাহের পরে মৃত্যুতে গুনাশৌচ দশদিন পালনীয়।

সূতিকাশৌচ

পুত্রজননে প্রসূতি ২০ দিন এবং কন্যা জননে একমাস প্রসূতি অশৌচ হয়, কিন্তু দশ দিনের পর অঙ্গ স্পৃশ্যতা দোষ থাকে না।

অজাতদন্ডা যে বালা যে চগর্ভাদ্ধিনির সূতাঃ

নতেষাংমগ্নি সংস্কারো ন পিওংনোদ কক্রিয়া। (গঃ পুঃ পূর্বঃ খঃ ১৬)।

অর্থাৎ যে সমস্ত বালকের দত্ত উদ্‌গত হয় নাই, যে বালক গর্ভ হতে নিঃসৃত হয়ে মৃত্যুবরন করেছে তাদের অগ্নি সংস্কার নাই, তাদেরকে মাটিতে পোতিত করতে হবে। তাদের জন্য কোন তর্পন বা পিও প্রদান প্রয়োজন নাই। কেবল মাত্র ভগবানের সন্তোষ্টি বিধানের জন্য পূজার্চ্চনা ও ভোগরাগ করা প্রয়োজন।

গর্ভস্রাব ও গর্ভপাত অশৌচবিচার

গর্তস্রাবে কেবলমাত্র প্রসূতি অশৌচ হয়। প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ এই চার মাসের মধ্যে গর্ভ নষ্ট হলে তাকে গর্ভস্রাব বলা হয়, আর গর্ভস্রাবে পক্ষিণী অশৌচ পালন করতে হয়, আচতুর্থা ভবেৎ প্রাবঃ পাত পঞ্চম ঘষ্ঠরোঃ (গঃ পুঃ পর্ব খঃ ১৭) অর্থাৎ চারি মাসের মধ্যে গর্ভ নষ্ট হলে গর্ভস্রাব বলা হয়, আর পঞ্চম বা ষষ্ঠ মাস পর্যন্ত যত সংখ্যক মাসে গর্ভপাত হয় ততদিন অশৌচ থাকবে, তার উপর আরও এক দিন অশৌচ পালন করে প্রসূতি সৰ্ব্ব কর্মের অধিকারীনী হবেন।

জীবিত সন্তান প্রসবাস্তে সেদিন সন্তানের মৃত্যু হলে, ৭ম বা ৮ম মাসোক্ত গর্ভপাতের ন্যায় অশৌচ পালন করতে হবে। একদিন জীবিত থাকলে তৎপরে সন্তানের মৃত্যু হলে ৯ম মাসের জাত সন্তানের ন্যায় অশৌচ পালন করতে হবে।

কিন্তু কোন অবস্থাতেই ব্রহ্মচারী ও সন্নাসীদের অশৌচ পালন করতে হবে না।

ব্রহ্মচাৰ্য্যাদ যিহোত্রার শুভিঃ গঙ্গাবর্জ্জনাৎ (গঃ পুঃ পুঃ খঃ ১৮

অর্থাৎ ব্রহ্মচারী বা অগ্নিহোত্রী তাদের কোন অশৌচ নাই, কারণ তারা সৰ্ব্বসঙ্গবিহীন বিধায় তাদের কোন রূপ অশৌচ স্পর্শ করতে পারেনা।

আমরা সামাজিকভাবে অশৌচ নিয়ে বিভিন্ন সমস্যায় পরি। যেমন, যে কোন মাঙ্গলিক কাজের দিন ঠিক করা হলো, কিন্তু হঠাৎ করে মৃতাশৌচ বা জননাশৌচ উপস্থিত হয়ে গেল, তখন আমরা কি করব সে বিষয়ে বৈদিক শাস্ত্রে বলা হয়েছে-

বিবাহোৎ সব যজ্ঞেষু অন্তরা মৃত সূতকে।

পূর্ব্ব সঙ্কল্লিতাদন্য বজ্জনঞ্চ বিধীয়তে ॥ গঃপুঃপূর্ব খঃ ১৯ অর্থাৎ বিবাহ যজ্ঞ ও মাঙ্গলিক কার্য্যের সময় যদি মরণাশৌচ বা জননাশৌচ উপস্থিত হয়, তাহলে পূর্ব্ব সঙ্কল্পিত কাৰ্য্য পরিত্যাগ

করতে হবে। গরুড় পুরানে আরও বলা হয়েছে-

মৃতেন শুধ্যতে সৃতি মৃতকং মৃতকামরা (গঃপুঃপূর্বঃ ২০)

অর্থাৎ যদি সন্তান মরনাশৌচের মধ্যে জন্মিয়া অশৌচের মধ্যে মৃত্যুবরণ করে, তাহলে সূতিকা সেই মরণাশৌচ দ্বারা উভয় অশৌচ হতে শুদ্ধি লাভ করবে। একটা মরণাশৌচের মধ্যে যদি অন্য মরণাশৌচ হয়, তাহলে পূর্ব্ব অশৌচের সহিত শেষোক্ত অশৌচ শেষ করতে হবে। কিন্তু এখানে লঘু ও গুরু বিচার করতে হবে।

১। সপিন্ডের মরণাশৌচ হতে নিজের মাতাপিতা গুরু অশৌচ এবং স্ত্রী লোকের পক্ষে স্বামীর মরণাশৌচ শুরু অশৌচ-এভাবে সম্বন্ধ ভেদে লঘু শুরু অশৌচ বিচার করতে হবে। কিন্তু লঘু অশৌচ দ্বারা কোন অবস্থাতে শুরু অশৌচকে নিবৃত্তি করা যায় না- এটাই সাধারণ বিধি। পিতামাতা-পুত্রের মহাগুরু, স্ত্রী লোকের মহাগুরু স্বামী, অবিবাহিতা কন্যার মহাগুরু-পিতামাতা এবং আচার্য্য দিক্ষা শুরু, মহাগুরুজনের নির্যান ঘটিলে প্রথমে ত্রিরাত্র উপবাস বিধি, অসমর্থ পক্ষে এক আহোরাত্র উপবাস করবেন। এখানে আর কয়েকটি প্রশ্ন আমাদের মাঝে আসে, সেই প্রশ্ন কয়টি হলো ১। জ্ঞাতি, ২। সাপিন্ড এবং ৩। সাকুল, আমরা কিভাবে বুঝব নিম্নে আলোচনা করা হল-

নিজেকে ধরে উর্দ্ধ ৭ম পুরুষ পর্যন্ত জ্ঞাতি আর জ্ঞাতির সন্তানগনই সাপিন্ড, ১০ম পুরুষ পর্যন্ত সাকুল্য এবং ১৪শ পুরুষ পর্যন্ত জ্ঞাতিকে সমানোদক, তাদের পরবর্তী সন্তানগনই গোত্রজ নামে অভিহিত হয় ।

খন্ডা অশৌচ বিচার

মতামহ মরনে ও শ্বশুর বা শ্বাশুড়ীর মৃত্যুতে জামাতা ত্রিরাত্র অশৌচ পালন করবে। নিজের মাতুল, মামাতো, পিসতৃতো, মাসতুতো ভাই পিতার মামাতো, পিসতুতো, মাসতুতো ভাই, মাসী, বিবাহিতা ভগ্নি, মাতামহী মৃত্যুতে পক্ষিনী অশৌচ পালন করতে হবে। কন্যার পক্ষে অশৌচঃ পিতা মাতার মৃত্যুতে বিবাহিতা কন্যা ত্রিরাত্র অশৌচ পালন করবে।

কোন ব্যক্তি দৈবদুলি পাকে পতিত হয়ে যা কারো দ্বারা অস্ত্রাঘাতে ক্ষত হয়ে যদি ৭ দিনের মধ্যে মৃত্যু বরণ করে তাহলে ত্রিরাত্র অশৌচ হবে এরপর মৃত্যু হলে পূর্ণাশৌচ দশ দিন পালন

করতে হবে।

হিংস্র পশু ও সম্পাদি দ্বারা দংশিত হয়ে, বৃক্ষাদি হতে পতিত হয়ে বা অগ্নিদগ্ধ, জলমগ্ন, বিষাক্ত দ্রব্য ভক্ষণ করে তিন দিনের মধ্যে মৃত্যুবরণ করলে পূর্ণাশৌচ ১০ দশ দিন পালন করতে হবে। প্রতিটি অশৌচান্তে ভগবানের প্রীতার্থে বিশেষ পূজার্চনা ও ভোগরাগ করা উচিত।

তদিন তুষ্টে জগৎ তুষ্ঠং গ্রীনিতে গ্রীনিতং জগত্। ভগবান শ্রীকৃষ্ণের তুষ্ঠিতেই সমস্ত জগৎ তুষ্ঠ হয়। ভগবান শ্রীকৃষ্ণ গীতায় আমাদের জানিয়ে দিয়েছেন অহং হি সর্বযজ্ঞানাং ভোক্তা চ প্রভুরেব চ।

ন ভূ মামডিজানন্তি তত্ত্বেনাশ্চ্যবত্তি যে ॥ (গীতা ৯/২৪।) অর্থাৎ আমিই সমস্ত যজ্ঞের ভোক্তা ও প্রভু। কিন্তু যারা আমার চিন্ময় স্বরূপ জানে না, তারা আবার সংসার সমূদ্রে পতিত হয়, তাই সমস্ত বৈদিক কর্মের উদ্দেশ্য হচ্ছে ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে সন্তুষ্টি করা-

কৃষ্ণার্থে অখিল চেষ্টা ॥ (ভঃ রঃ সিঃ) অর্থাৎ শুধুমাত্র কৃষ্ণকে সন্তুষ্ট করার জন্যই আমাদের সমস্ত প্রচেষ্টা নিয়োজিত হওয়া উচিত।

এই অশৌচ বিচার শুধু বৈষ্ণবদের জন্যই পালনীয়, এর মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, সকল বর্ণের জন্য এই অশৌচ পালনীয় এবং সর্বশাস্ত্র সম্মত।

হরে কৃষ্ণ

Comments