কেন এ কলিযুগে ‘হরেকৃষ্ণ' মহামন্ত্র ?
সাধারণত যুগের আবর্তন অনুসারে এ কলিযুগ দ্বাপরের পরের যুগ হলেও ব্রহ্মার একদিন অর্থাৎ এক কল্প বা এক হাজার চতুর্যুগের এ বিশেষ কলিযুগেই বেদেরও দুর্লভ এ হরিনাম স্বয়ং শ্রীমন্মহাপ্রভু কর্তৃক এ জগতে প্রকাশিত হয় । কেবল এ যুগেই যেকোনো সাধারণ মানুষ এ নাম গ্রহণ করার মাধ্যমে প্রেমভক্তি লাভ করতে পারে, তাই এ যুগকে প্রেমযুগ বলা হয়। হরেকৃষ্ণ মহামন্ত্র কীর্তন প্রসঙ্গে শ্রীল প্রভুপাদের অত্যন্ত জোরালো উপস্থাপনা হলো :এ কলিযুগে ভগবানের নামই হচ্ছে একমাত্র পন্থা, এ ছাড়া আর কোনো গতি নেই, আর কোনো গতি নেই, আর কোনো গতি নেই।” এ কলিযুগে হরেকৃষ্ণ মহামন্ত্রই শ্রীকৃষ্ণের অবতার। কেবল এ নাম কীর্তন করার ফলে যেকোনো মানুষ সরাসরি ভগবানের সঙ্গ লাভ করতে পারে। যিনি তা করেন, তিনি অবশ্যই উদ্ধার লাভ করেন। এ নামের প্রভাবেই কেবল সমস্ত জগৎ নিস্তার পেতে পারে। কলিযুগে হরিনামই যে উদ্ধার পাওয়ার একমাত্র উপায় এবং এ ছাড়া যে আর কোনো গতি নেই, তা সাধারণকে বোঝাবার জন্যই ‘হরের্নাম’ ও ‘নাস্ত্যেব’ শব্দ দুটি তিনবার করে ব্যবহার করা হয়েছে। ‘কেবল' শব্দের দ্বারা নিশ্চিতভাবে জ্ঞান, যোগ, তপশ্চর্যা, সকাম কর্ম আদি অন্য সমস্ত পন্থা নিবারণ করা হয়েছে। এ শ্লোকে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে, যদি কেউ অন্য কোনো পন্থা অবলম্বন করে, সে কোনোমতেই উদ্ধার পেতে পারে না। সে জন্যই তিনবার ‘নাস্ত্যেব, নাস্ত্যেব, নাস্ত্যেব কথাটি উল্লেখ করা হয়েছে, যার দ্বারা স্থির নিশ্চিতভাবে পরমার্থ সাধনের প্রকৃত পন্থা নিরূপিত হয়েছে।সাধারণ মানুষকে বোঝাবার জন্য তিনবার পুনরুক্তি করা হয়, যেমন : 'তোমাকে এটি করতেই হবে, করতেই হবে, করতেই হবে।” তাই বৃহন্নারদীয় পুরাণে তিন সত্য করে বলা হয়েছে যে, এ কলিযুগে হরিনামই উদ্ধার পাওয়ার একমাত্র উপায়। যাতে মানুষ নিষ্ঠাভরে নামের আশ্রয় গ্রহণ করে মায়ার বন্ধন থেকে মুক্ত হতে পারে ।
আমাদের কৃষ্ণভাবনা আন্দোলনে কেবল হরেকৃষ্ণ মহামন্ত্র কীর্তনের উপরেই জোর দেওয়া হয়েছে। যারা এ যুগে সিদ্ধিলাভের এ পন্থাটি মানে না, তারা অনর্থক জ্ঞানের চর্চা, যোগের অভ্যাস অথবা সকাম কর্ম ও তপশ্চর্যার মাধ্যমে সিদ্ধিলাভের চেষ্টা করে কালক্ষয় করছে। নিজেদের সময় তো নষ্ট করছেই, পরন্তু তাদের অনুগামীদেরও বিপথে পরিচালিত করছে। আমরা যখন সে কথাটি অত্যন্ত সরল ভাষায় মানুষকে বলি, তখন বিরুদ্ধ গোষ্ঠীর সদস্যরা আমাদের প্রতি ক্রুদ্ধ হয় । কিন্তু শাস্ত্র অনুসারে আমরা সেসব তথাকথিত জ্ঞানী, যোগী, কর্মী ও তপস্বীদের সঙ্গে আপোস করতে পারি না । তারা যখন বলে যে তাদের প্রচেষ্টাও আমাদের মতো সৎ, তখন আমরা বলতে বাধ্য হই যে আমাদের প্রচেষ্টাই কেবল সৎ, তাদেরটা সৎ নয়। এ আমাদের অনমনীয়তা নয়, শাস্ত্রের উক্তি । কখনোই আমাদের শাস্ত্রনির্দেশ থেকে বিচ্যুত হওয়া উচিত নয়। (চৈ. চ. আদি ২০-২৫)
Comments
Post a Comment